খনিজ না দিলে ইউক্রেনে স্টারলিংক বন্ধ করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

খনিজ না দিলে ইউক্রেনে স্টারলিংক বন্ধ করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ পাওয়ার জন্য কিয়েভের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে, ইউক্রেনে ইলন মাস্কের গুরুত্বপূর্ণ স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

মার্কিন কর্মকর্তারা এমন সতর্কতা জারি করেছেন বলে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স

গত ২০ ফেব্রুয়ারি কিয়েভে ইউক্রেনীয় নেতা ভোলোদিমির জেলেনস্কি এবং ট্রাম্পের দূত কিথ কেলগের মধ্যে এক বৈঠক হয়। সেখানে ইউক্রেনীয়দের বলা হয়েছিল যে, যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের চুক্তিতে স্বাক্ষর না করে, তাহলে তারা স্টারলিংক স্যাটেলাইট পরিষেবা ব্যবহারের সুযোগ দ্রুতই হারাবে।  

বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত তিনটি সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টের প্রাথমিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের আলোচনায় স্পেসএক্সের মালিকানাধীন স্টারলিংকের ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের বিষয়টি উঠে আসে।  

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান মিত্র ইলন মাস্ক ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর ২০২২ সাল থেকে চল্লিশ হাজারেরও বেশি ইন্টারনেট টার্মিনাল ইউক্রেনে অনুদান হিসেবে দিয়েছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন এবং তার সেনাবাহিনীর জন্য স্টারলিংক গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় সেনারা টার্মিনালগুলো ব্যাপক ব্যবহার করে আসছেন।  

ইউক্রেনের ইন্টারনেট ব্যবস্থা এখন স্টারলিংকে কাজ করে। তারা এটিকে তাদের দিকনির্দেশক ধ্রুব তারা হিসেবেই বিবেচনা করে। দেশটি যদি এই সিস্টেম ব্যবহারের সুযোগ হারায়, তাহলে তাদের জন্য তা একটি বড় আঘাত হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও সামরিক সহায়তা পেতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইউক্রেনের সম্পদে অগ্রাধিকারমূলক অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিয়েছিলেন জেলেনস্কি। ওইসব সম্পদের মধ্যে বিরল খনিজ পদার্থও রয়েছে। তবে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ৫০ শতাংশের মালিকানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে যাবে, এমন কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে জেলেনস্কি রাজি নন। তিনি নিজের দেশ বিক্রি করতে পারবেন না বলে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বলেন।

ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেছেন, ইউক্রেনের এমন প্রতিক্রিয়া মেনে নেওয়া হবে না। তিনি ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের এমন মনোভাব নরম করে খনিজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরামর্শ দিয়েছেন।

ট্রাম্প এবং মাস্ক উভয়ই ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে জেলেনস্কির সমালোচনা করে যাচ্ছেন। তারা তাকে একজন ‘স্বৈরশাসক’ বলে চিহ্নিত করেছেন। তাদের দাবি, জেলেনস্কি তার দেশে জনপ্রিয় নন। ট্রাম্প বলেছেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্তের বিষয়ে অভিযোগ করার কোনো অবস্থান ইউক্রেনের নেই।  

ফেব্রুয়ারির শুরুতে জেলেনস্কি জানিয়েছেন যে, ইউক্রেনের প্রায় অর্ধেক বিরল খনিজ পদার্থের মজুদ নাকি রাশিয়ার দখলে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গে পণ্য বিশেষজ্ঞ জাভিয়ের ব্লাস জানিয়েছেন যে, আলোচ্য চুক্তি থেকে ট্রাম্পের প্রত্যাশা অত্যন্ত অতিরঞ্জিত। কারণ ইউক্রেনে ছোট স্ক্যান্ডিয়াম খনি ছাড়া নাকি অন্য কোনো উল্লেখযোগ্য বিরল খনিজের মজুদ নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS