দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন মোহাম্মদ আলী আরাফাত। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্বে থাকা এ নেতা দলটির গুরুত্বপূর্ণ থিংকট্যাংক হিসেবে পরিচিত।
বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে সমসাময়িক রাজনীতি, সংসদীয় এলাকা নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা বিস্তারিত বলেছেন।
বাংলানিউজ: প্রথমবারের মতো প্রতিমন্ত্রী হয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আপনি গণমাধ্যমের সুরক্ষায় কী করতে চান?
মোহাম্মদ আলী আরাফাত: সরকারের সর্বোচ্চ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে গণমাধ্যমের অবশ্যই অধিকার থাকতে হবে কিংবা আছে। গণমাধ্যমের প্রশ্ন করার, কিংবা যেকোনো বিচ্যুতি তুলে ধরার অধিকার রয়েছে। আমরা গণমাধ্যমের সেই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাই। আমাদের যে কর্তৃপক্ষ, যেমন আমি একটি দায়িত্ব নিয়ে আছি, আমি তো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছি। অবশ্যই আমাকে জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হবে।
বাংলানিউজ: তথ্য প্রযুক্তি আইনে সাংবাদিকদের আগে জেল হয়েছে। নতুন আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হবে কিনা হলে প্রতিকার কী?
মোহাম্মদ আলী আরাফাত: নতুন যে তথ্য প্রযুক্তি আইন-সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট- সিএসএ হয়েছে মামলা করলে সেখানে জেলের কোনো বিধান নেই। এখন কারো বিরুদ্ধে মামলা করা হলে মামলা চললে তাকে শুধু জরিমানা করা যাবে। আর জেল টার্ম যেখানে আছে, ধরা যাক, জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুকে কেউ যদি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সিস্টেমে ঢুকে যায় তখন তো সে সাংবাদিক, শিক্ষক না রাজনীতি করে এটা দেখা হবে না। সোজা জেলে ঢোকানো হবে।
বাংলানিউজ: প্রিন্ট মাধ্যমের সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড থাকলেও টিভি ও অনলাইনে নেই। আপনি কী কোনো উদ্যোগ নেবেন?
মোহাম্মদ আলী আরাফাত: এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থানে এখনো আমি আসিনি। তবে এ প্রশ্নটি উঠেছে, আমি দেখছি, বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করছি, অনেকের মতামত নিচ্ছি। এরপরে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসবো, যে কীভাবে এটা করা যায়।
বাংলানিউজ: এবার রাজনীতির প্রসঙ্গে আসা যাক, বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। ফলে রাজপথের বিরোধী দল শূন্য সংসদ কেমন কার্যকর হবে?
মোহাম্মদ আলী আরাফাত: খুবই কার্যকর হবে। যে বড় দলের কথা আপনি বলছেন, সে বড় দলের নেতা একজন পলাতক আসামি। তিনি ২১আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। তার সঙ্গে ছিল জামায়াত। বর্তমান সংসদ নিয়ে তিনি আরও বলেন, এখন মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় বিশ্বাসীরা আওয়ামী লীগের পদে থাকলেও নিজের যোগ্যতায় স্বতন্ত্রভাবে জয়ী হয়ে এসেছেন। তাদের সংবিধানের ৭০ ধারার বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
বাংলানিউজ: বিএনপি কি ভুল করলো?
মোহাম্মদ আলী আরাফাত: ভূ-রাজনীতির বিষয়গুলো বিএনপি বুঝলো না। দলটির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের বোঝার কথাও না। কিন্তু আমরা মনে করি, তারেক রহমান যিনি একজন পলাতক আসামি তার বাইরে এই যে মির্জা ফখরুল ইসলামসহ দলের অন্য যারা ছিলেন তারা হয়তো দলকে একটি ইতিবাচক রাজনীতির দিকে নিতে পারতেন। কিন্তু তারাও ব্যর্থ হয়েছেন। ২৮ অক্টোবর তারেক রহমানের নির্দেশনায় তারা যে ঘটনাগুলো ঘটালেন, একটি নৈরাজ্যের সৃষ্টি করলেন, পুলিশ সদস্যকে হত্যা করলেন। এরপর জ্বালাও-পোড়াও করলেন। এই কাজগুলো থেকে তারা বেরিয়ে একটি ইতিবাচক রাজনীতিতে আসতে পারতেন।
বাংলানিউজ: দুটি পরাশক্তি চীন ও ভারত কোন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন করেছে?
মোহাম্মদ আলী আরাফাত: ভূ-রাজনীতিতে এটা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ম্যাজিক। তিনি জানেন সবাইকে নিয়ে কীভাবে কাজ করতে হয়। বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতি, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ নীতিতে এগিয়ে চলছেন তিনিও।
বাংলানিউজ: রাজধানীতে ওয়াটার বাস সার্ভিস কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত বর্ধিত করার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে-
মোহাম্মদ আলী আরাফাত: আপাতত এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে আমরা আলাপ আলোচনা করে দেখতে পারি। এটা করা গেলে যানজট অনেকটা কমে যাবে বলে মনে করি।
বাংলানিউজ: নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, আপনার নির্বাচনী এলাকার বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন করবেন। সেই কাজের অগ্রগতি জানতে চাই।
মোহাম্মদ আলী আরাফাত: পুনর্বাসনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছি। ভাসানটেকবাসীকে নিয়ে কাজ চলছে। এছাড়া পানির পাম্প বসানো, ড্রেন, রাস্তাসহ নানা রকম কাজ চলমান রয়েছে। আর পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে বস্তি বলে কিছু থাকবে না। সবাইকে পুনর্বাসিত করা হবে। এটা অনেক কাজ, কিছুটা সময় লাগবে।