ক্যারিয়ারে কাজের পাশাপাশি আলোচনা তর্ক সবসময় সঙ্গী ছিল। খুব অল্প বয়সেই পেয়ে যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সিনেমার ভেতর দিয়েই বড় হওয়া তার। এখন ম্যাচিউরড দিঘীর ভাবনাগুলো কেমন? সে কথাই বলেছেন ইত্তেফাকের সাথে।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংসে রয়েছেন চিত্রনায়িকা দিঘী। এত অল্প বয়সে ‘দ্বিতীয় ইনিংস’ বিষয়টা খটকা লাগলেও যারা দিঘীর শিশু চরিত্রের কাজ দেখেছেন তারা জানবেন এটা দিঘীর একেবারেই নতুন ইনিংস। তবে চলচ্চিত্রের এই ম্যাচিউরড নায়িকা চরিত্রের চলাচলটা মসৃণ ছিল না কোনোভাবেই। শুরুতেই দেলওয়ার জাহান ঝন্টু’র মতো সিনিয়র নির্মাতার সাথে কাজ করলেও সেখানে কিছুটা বাহাস তৈরি হয়। দিঘী স্বীকার করেন যে, তার ভুল ছিল ক্যারিয়ারের শুরুতে। তবে তাতে মোটেও অনুতপ্ত নন। সেখান থেকেই শিখেছেন বরং। এরপর মডেলিং, ইভেন্টে পারফরম্যান্স থেকে সবকিছু যেখানেই কাজ করেছেন সবখানেই আলোচনায় ছিল দিঘীর নামটি। এইসব আলোচনা, সমালোচনা, তর্ক, বিতর্ক সবকিছুর সাথেই যখন দিঘীর নামটি আসে তখন তার প্রতিক্রিয়া কেমন হয়? দিঘী বলেন,‘আমি ইচ্ছে করে ভাইরাল হতে চাই না। বরং এখন আমি কথা বলা কমিয়ে দিয়েছি, যাতে কম ভাইরাল হই!’
দেখুন, কিছু কিছু কাজ থাকে, যেখানে আপনি এর অংশ হতে পারলেই মনে হবে আপনার জীবনে এক বিশেষ প্রাপ্তি হয়ে গেছে। এই ছবিটি তেমন। প্রথমত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র, দ্বিতীয়ত শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত। এই ছবিতে কাস্ট হবার পর আমার কাছে মনে হয়েছে- হয়তো আমি সেই শৈশব থেকে এই দীর্ঘ পথে কিছুটা হলেও অর্জন করতে পেরেছি। আমার মায়ের দোয়া ছিল আমার সাথে। ছবিটি প্রিমিয়ারের পর প্রধানমন্ত্রী যখন আমাকে এপ্রিশিয়েট করলেন, সত্যিই সেই অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।’
দিঘীকে ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রের অল্প সময় দেখা দিলেও সেই সময়টুকুতেই তিনি নজর কেড়েছেন দর্শকদের। শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে দিঘী বললেন,‘আমি ছিলাম পুরো প্রোডাকশনের সবচেয়ে ছোট। তাই খুব আদরে আদরেই কাজটি করেছি এবং শ্যাম বেনেগাল স্যার আমার একটি শট বুঝিয়ে দিয়েই চকলেট নয়তো যেকোনো ক্যান্ডি খেতে দিতেন। সত্যিই সময়গুলো অসাধারণ ছিল।’
টিকটক ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
দিঘীর সাথে কোনো আলাপচারিতায় টিকটক প্রসঙ্গ যেন পিছু ছাড়তে চায় না। অবশ্য কোনো প্রশ্নেই বিরক্তি নেই তার। ঝটপট জবাব দিয়ে দেন। দিঘী বলেন,‘আগে অনেককে উদাহরণ টেনে বলতাম যে অমুক টিকটক করেন, তমুকে টিকটক করেন, তাতে তো দোষ হয় না। তো আমি কেন? এখন এসব ব্যাখ্যাও দিই না। কারণ দেখুন, এটা অবশ্যই এখনকার ট্রেন্ডিংয়ের একটি কাজ। পৃথিবীর অনেক তারকাই করছে। আর তারকা হিসেবে ব্র্যান্ড প্রমোশনও করছি এর মাধ্যমে। এটা তো আমার প্রফেশনেরই একটি অংশ। তাই এটা নিয়ে কৈফিয়ত দেবার কিছু নেই।’
সাংবাদিকতায় পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার গোল
ফিল্ম এন্ড মিডিয়ায় পড়াশোনা করছেন। তাই মাঝে কিছুটা কাজের বিরতিও গিয়েছে। তবে দিঘীর মতে, নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি আমি রুটিন মেপেই কাজ করছি। আমি খুবই পরিশ্রমী একটি মেয়ে। হয়তো পরিবারই এমনটা হতে শিখিয়েছে আমাকে। একসময় ‘আমি মোটা কেন?’ এসব বলে অনেকে ট্রল করত। এখন কাজের প্রয়োজনেই শুকিয়েছি। এখন আবার কেউ কেউ ট্রল করছেন বেশি শুকনো হয়ে গেছি। সুতরাং আপনি এই ট্রল প্রজাতির কাছ থেকে কোনো উত্সাহ পাবেন না কখনও। তাই এসব একদম ভাবাটা ছেড়ে দিয়েছি। নিজের কাজের প্রতি একাগ্রতা নিয়েই চলি। কোনো পরামর্শ বা নিজের সমালোচনাটাও শুনতে চাইলে বাবার কাছে জিজ্ঞেস করি। বাবা সুন্দর করে বলে দেয়। বাবাই আমার সব। বন্ধু-অভিভাবক।
দিঘীর মা প্রখ্যাত চিত্রনায়িকা দোয়েল, বাবা বরেণ্য অভিনেতা সুব্রত। চলচ্চিত্র পরিবারের সন্তান হয়ে নিজের ফিল্মোগ্রাফিটা এমন এক উচ্চতায় নিতে চান। যখন সকলেই প্রশ্নাতীতভাবে প্রশংসা করবে, কেউ কেউ অনুসরণ করবে। সে পথেই হাঁটতে চান দিঘী। আর জীবনে একবার হলেও একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চান। স্বপ্নগুলোও যেন বড় হচ্ছে নিজের প্রাপ্তির সাথে সাথে..